পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল (পিসিবি)
বিশ্বস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সু-রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশকে
পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল (পিসিবি) মুক্ত করি।
  বিস্তারিত  
পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল (পিসিবি)
বিশ্বস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সু-রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশকে
পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল (পিসিবি) মুক্ত করি।
  বিস্তারিত  
পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল (পিসিবি)
বিশ্বস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সু-রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশকে
পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল (পিসিবি) মুক্ত করি।
  বিস্তারিত  
পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল (পিসিবি)
বিশ্বস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সু-রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশকে
পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল (পিসিবি) মুক্ত করি।
  বিস্তারিত  

পিসিবি কি?

পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল (পিসিবি) মানবসৃষ্ট একটি জৈব রাসায়নিক যৌগ। পিসিবি বর্ণহীন ও উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল রাসায়নিক পদার্থ । পিসিবি-এর ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণের জন্য এটি এক সময় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার ও ক্যাপাসিটরে কুলিং এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পিসিবি খুব সহজে ভেঙ্গে যায় না বা হ্রাস পায় না বিধায় পরিবেশে দীর্ঘদিন অপরিবর্তিত অবস্থায় টিকে থাকতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যের জন্য পিসিবি Persistent Organic Pollutants (POPs) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পিসিবি মাটি ও পানিতে দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং তা খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশের মাধ্যমে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে।

পিসিবি যেভাবে খাবারে (মাছে) প্রবেশ করে

১. পিসিবি রাসায়নিক দ্রব্যটি গর্ভে থাকা শিশু ও বাচ্চাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই রাসায়নিক দ্রব্যটি মূলত কলকারখানা থেকে পানিতে অবমুক্ত হয়। যদিও শিল্প কারখানাগুলো ১৯৭৬ সাল থেকে নদীতে পিসিবি নির্গমন বন্ধ করেছে, তবে এই রাসায়নিক এখনও পানিতে বিদ্যমান।

২. পানির নিচে থাকা ছোট জীব পিসিবি ভক্ষণ করে থাকে যা পরবর্তিতে মাছেরা খেয়ে থাকে। পিসিবি মূলত মাছের চর্বিতে জমা থাকে। ছোট বা মাঝারি মাছের তুলনায় বড় চর্বিযুক্ত মাছে পিসিবির পরিমান বেশি থাকে।

৩. পিসিবিযুক্ত মাছ দীর্ঘদিন যাবত খেলে চর্বিতে এটা বহুদিন জমা থাকে। ফলে পিসিবি, গর্ভে থাকা শিশু ও বাচ্চাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বাচ্চাদের শরীরে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পরে অক্ষমতা তৈরী করে। তাই গর্ভবতী মা এবং ১৫ বছরের নিচে বাচ্চাদের মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত।

পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের উপর পিসিবি এর ক্ষতিকর প্রভাব

পিসিবি পরিবেশের সংস্পর্শে আসলে তা খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশের পর জৈব বিবর্ধনের (Bio-magnification) মাধ্যমে উচ্চ মাত্রায় চর্বিযুক্ত টিস্যুতে জমা হয়ে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি করে এবং পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব বিস্তার করে। পিসিবি খাবার, পানি ও বাতাসের মাধ্যমে লিভার, কিডনি, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড ইত্যাদিতে প্রবেশ করে নিম্নবর্ণিত জটিল রোগের সৃষ্টি করে:

পিসিবি লিভারের ক্ষতি করে এবং লিভার-ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

গল ব্লাডার বা পিত্ত-থলির ক্যান্সার, খাদ্যনালীর ক্যান্সার, মস্তিষ্কের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টের আশংকা থাকে।

পিসিবি সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি নাক, ফুসফুসে জ্বালা, ত্বকে সমস্যা ও চুলকানি রোগে ভুগতে পারে এবং চোখের সমস্যায়ও আক্রান্ত হতে পারে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

মস্তিষ্কে বিষক্রিয়া, স্নায়ু দুর্বলতা এবং স্মরণ শক্তি হ্রাস পেতে পারে।

নারীর গর্ভধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

গর্ভাবস্থায় পিসিবির সংস্পর্শে থাকা মহিলারা বিকলাঙ্গ, কম ওজন ও দুর্বল স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন শিশু জন্ম দিতে পারে।

শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তার করে।

পিসিবি প্রাণীর বংশগতি প্রভাবিত করে বিলুপ্তি সাধন করতে পারে।

পিসিবি ব্যবস্থাপনায় করণীয়

পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল (পিসিবি) পরিবেশ সম্মতভাবে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ সেক্টরের ৭টি সংস্থায় ইনভেন্টরি টিম টেস্ট কিট ব্যবহার করে মাঠ পর্যায়ে পিসিবি সনাক্তকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। টেস্ট কিট-এর মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে সনাক্তকৃত ট্রান্সফর্মারের তেলের রাসায়নিক পরীক্ষায় পিসিবি এর মাত্রা ৫০ পিপিএম বা এর উপরে পাওয়া গেলে তা পরিবেশ সম্মতভাবে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। পিসিবি থেকে নিরাপদ থাকার জন্য নিম্নলিখিত কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে :

যে সকল টেকনিশিয়ান বা শ্রমিক ট্রান্সফর্মার মেরামত করার কাজে নিয়োজিত থাকে তাদেরকে অবশ্যই সেফটি সামগ্রী যেমন হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, পিপিই, গগলস, বুট ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।

ট্রান্সফর্মারের তেল সেন্ট্রিফিউজ করার পর যে গাদ (sediment) জমা হয় তা ড্রেনের মাধ্যমে বাহির না করে সেগুলো পরিবেশ সম্মতভাবে ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে।

যেসব স্থানে পিসিবিযুক্ত ট্রান্সফর্মার রাখাবে সে সমস্ত স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

ট্রান্সফর্মার মেরামত করার কাজে পরিত্যক্ত তেল মোছার জন্য ব্যবহৃত ন্যাকরা পুঁড়ানো পরিহার করতে হবে।

টেস্ট কিট দিয়ে পরীক্ষা করার পর ট্রান্সফর্মার/ক্যাপাসিটর/তেলের ড্রাম এর যেগুলোতে পিসিবি এর মাত্রা ৫০ পিপিএম বা এর উপরে থাকবে সেগুলো লাল লেভেল দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে। এছাড়াও যেসব ট্রান্সফর্মার/ক্যাপাসিটর/ তেলের ড্রাম এ স্যাম্পলিং করা হবে সেগুলোতে ইনভেন্টরী আইডি লিখতে হবে।

পিসিবি এর বিস্তার রোধে অধিক পুরাতন ট্রান্সফর্মারের তেলের সাথে অপেক্ষাকৃত কম পুরাতন ট্রান্সফর্মার তেল একত্রে মিশিয়ে সেন্ট্রিফিউজ করা পরিহার করতে হবে। প্রয়োজন হলে সেন্ট্রিফিউজ করার পূর্বে ট্রান্সফর্মারের তেল পিসিবি মুক্ত কিনা তা পরীক্ষা করে নিতে হবে।

টেস্ট কিট দিয়ে পরীক্ষা করার পর যেসব ট্রান্সফর্মার/ক্যাপাসিটর/তেলের ড্রাম যেগুলো পিসিবি মুক্ত সেগুলো সবুজ লেভেল দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে ।

টেস্ট কিট দিয়ে পরীক্ষা করার পর যেসব ট্রান্সফর্মার/ক্যাপাসিটর/তেলের ড্রাম যেগুলো পিসিবি সাসপেক্টটেড হবে সেগুলো হলুদ লেভেল দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে ।

ট্রান্সফর্মার সার্ভিসিং করার সময় কিছু পরিমাণ তেল চুইয়ে বা লিকেজ এর মাধ্যমে বের হলে লিকেজ এর স্থান আঠা বা গ্যাসকিট ব্যবহার করে বন্ধ করতে হবে।

পুরাতন/অব্যবহৃত/নষ্ট ট্রান্সফর্মার/ক্যাপাসিটর / টপ আপ-কৃত ট্রান্সফর্মার নিলাম করার পূর্বে সেগুলোর তথ্য পর্যালোচনা করে প্রয়োজন হলে পিসিবি পরীক্ষা করতে হবে।

FAQs

পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল (পিসিবি) মানবসৃষ্ট একটি জৈব রাসায়নিক গ্রুপ যা ক্লোরিন, হাইড্রোজেন এবং কার্বন পরমাণু নিয়ে গঠিত। পিসিবি বর্ণহীন ও উচ্চ তাপমাত্রায় সহনশীল রাসায়নিক গ্রুপ যার মধ্যে অনেকগুলি রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। পিসিবি-এর ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ হয় অণুতে ক্লোরিন পরমাণুর সংখ্যা এবং অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। পিসিবি-এর ভৌত ও রাসায়নিক গুনাগুনের জন্য এটি এক সময় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার ও ক্যাপাসিটরে কুলিং এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পিসিবি খুব সহজে ভেঙ্গে যায়না বা হ্রাস পায় না ফলে পরিবেশে দীর্ঘদিন স্থায়ী থাকে। এই বৈশিষ্টের জন্য পিসিবিকে Persistent Organic Pollutants (POPs) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পিসিবি মাটি ও পানিতে দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং তা খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশের মাধ্যমে জীবদেহের ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে।

Persistent Organic Pollutants (POPs) একটি জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা পরিবেশে দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এটি মানুষের শরীর এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। POPs পরিবেশের আসলে তা খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশের মাধ্যমে জীবদেহে প্রবেশ করে। POPs-এর প্রধান বৈশিষ্ঠ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো, এটি জীবদেহের চর্বিযুক্ত টিস্যুতে দীর্ঘদিন অবস্থান করে, যা জীবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া মাটি, পানি, বায়ু ও জীবের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। জীবদেহে দীর্ঘদিন অবস্থান এবং ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে POPs বিশ্বব্যাপী হুমকিস্বরূপ।

পিসিবি পরিবেশের সংস্পর্শে আসলে ও খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশের পর জৈব বিবর্ধনের (Bio-magnification) মাধ্যমে উচ্চ মাত্রার চর্বিযুক্ত টিস্যুতে জমা হয়ে বিভিন্ন ধরনের রোগ এবং পরিবেশ এর উপর বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করে। পিসিবি খাবার, পানি ও বাতাস এর মাধ্যমে লিভার, কিডনি, ফুসফুস, হৃৎপিন্ড ইত্যাদিতে প্রবেশ করে চর্বিযুক্ত টিস্যুতে জমা হয়ে নিম্নবর্ণিত জটিল রোগের সৃষ্টি করে :

  • পিসিবি লিভারের ক্ষতি করে এবং লিভার-ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
  • গল ব্লাডার ক্যান্সার, খাদ্যনালীর ক্যান্সার, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট, মস্তিস্কের ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারের আশংকা থাকে।
  • পিসিবি সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি নাক, ফুসফুসে জ্বালা, ত্বকে সমস্যা ও চুলকানি রোগে ভুগতে পারে এবং চোখের সমস্যায়ও আক্রান্ত হতে পারে।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়।
  • মস্তিষ্কে বিষক্রিয়া, স্নায়ু দুর্বলতা এবং স্মরণ শক্তি হ্রাস পেতে পারে।
  • শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তার করে।
  • পিসিবি প্রাণীর বংশগতি প্রভাবিত করে বিলুপ্তি সাধন পরতে পারে।